top of page
Search

আত্মনির্ভর


আত্মনির্ভর এই শব্দ সুস্থ সাধারণ মানুষের পক্ষে ভালো ভাবে কার্যকরী হোক বলে নানা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকর্তাগণ জনসাধারণকে আশ্বাস দিয়ে থাকেন প্রায় সব দেশের সব নাগরিককে যাতে তারা নিজের,নিজের পরিবারের কার্যভার আত্মনির্ভরশীল ভাবে দায়িত্ব পালন করে নিজের গ্রামের,নিজের দেশের উন্নতির জন্য সাহায্য করতে পারে বলে।

 

কিন্তু আধুনিকীকরণের উন্নতশীল এই বিশ্বতে নানা উন্নত ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা,স্বাস্থ্যব্যবস্থা,খাদ্যব্যবস্থা,বিজ্ঞানিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও কোথাও না কোথাও  এর প্রভাব কম পড়েই যায়।

 

একটি গ্রামে এক পরিবারে দুজন ছেলে মেয়ের সন্তানের পরে তিন নম্বরে আরও এক ছেলে সন্তান জন্ম নিয়ে ছিল।সেই পরিবারে আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলেও তার মা বাবা খুব স্নেহ যত্নে সেই সন্তানের ও লালন পালন করতে লাগলো দেখতে দেখতে সেই সন্তান বড়তো হল ঠিকই কিন্তু যখন তার চলার কথাবার্তা বলার শোনার বয়স হয়ে গেলো তখন সে নাকি চলতেও পারে না কথা বলতেও পারে না আর কথা শুনতেও পারে না।

 

গ্রামের আর্থিক অবস্থার দুরব্যবস্থার সাথে পরিবারের দেখাশোনার তো কষ্ট ছিলই মা বাবার মধ্যে তার উপরে একটা নতুন দুঃখের পাহাড় এই নতুন সন্তান যাকে নিয়ে কত স্বপ্নে এক মা বাবা তার লালন পালন করেছিলেন সেও নাকি এক অপাহেচ বাচ্চা।

 

মা বাবা গ্রামের সমাজের নানা অবাঞ্ছিত কথা বার্তাগুলো সহন করে আছে একদিকে তার সঙ্গে পরিবারের তিন সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্বভার ও আছে।

এই ভেবে সমাজের সব সমস্যাগুলি তারা অদেখা মতন করে নিজের সন্তানের ভরণপোষণের জন্য বাবাতো ছোট খাট চৌকিদারি, গ্রামের লোকেদের বাড়িতে হাজিরির কাজতো করতেই ছিল তার সঙ্গে মা ও তার বাড়ির কাজকর্ম সন্তানের লালনপালন ভরণপোষণের কাজ তাড়াতাড়ি সেরে অন্যের বাড়িতেও ঝি মজুরির কাজ করতে শুরু করে দেয়।যাতে বাড়ির এই অবস্থাতে সে ও নিজের স্বামীর সাথে মিলে নিজের পরিবারের সন্তানের জন্য সংসারিক খরচ পূরণে সাহায্য করতে পারে বলে।

 

এই ভাবেই কয়েক বছর চলে গেল সময়ের সাথে সাথে বাচ্চারাও বড় হয়ে গেল।বড় ছেলে আর মেয়ে অন্যের সাধারণ বাচ্চাদের মতন স্কুল আসা যাওয়া শুরু করে বাড়ির আর বিদ্যালয়ের শিক্ষার সাথে বড় হতে লাগলো।একদিকে সেই ছোট বাচ্চা সময়ের সাথে বড়তো হয়ছে ঠিকই কিন্তু সে চলতে পারে না বলতে শুনতে কিছুই পারে না।সে সাধারণ বাচ্চার মতন স্কুলেরতো দূরের কথা বাড়ির শিক্ষা অব্দি ভালো ভাবে শিখতে পারছিল না।এই কারণে তার মা বাবা বাড়ির বাইরে যতই সহনশীলতার উদাহরণ দিলেও বাড়ির ভিতরে তারা তাদের ছোট বাচ্চার এই অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ভেঙ্গে যেতেন।

 

সময়ের সাথে সাথে ভগবানের দয়ায় সেই অপাহেচ বাচ্চাটি আস্তে আস্তে চলা ফেরা করতে শিখে নিলো কথাবার্তা বুঝতে ও বোঝাতে শিখে নিলো।সেই বাচ্চাটি কয়েক দিনের পর সাধারণ বাচ্চাদের মতন স্কুল যেতে শুরু করে দেয় যদিও সে ভালো ভাবে বলতেও পারে না আর শুনতেও পারে না অল্প অল্প ইশারার সূরে সে এই নতুন জিবনের পথে চলতে শুরু করে দেয়।

 

ভগবানের আশীর্বাদে পাওয়া নতুন জিবনের সুখ তার সাথে সাথে তার পরিবারের জন্য ও আনান্দদায়ক ছিল।কিন্তু এই আনন্দ থেকে ও বড় ছিল এই হৃদয়হীন জটিল সমাজের রীতি নীতি যেখানে শুধু ভালো কথাবার্তা বলতে পারে শুনতে পারে ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে পারে নানা অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান গুলিতে অংশগ্রহণ করে নানা প্রতিভার বিজয়ী পুরষ্কার,সুন্দররুপ এই সব গুলির গুন থাকলেই সমাজ কোনো বাচ্চাকে সাধারণ সংস্কার সম্পন্ন বাচ্চা বলে চিহ্নিত করে।আর এর মধ্যে ছিল সেই বাচ্চাটি ঠিক এই সব জ্ঞানের বিপরীত।তার জন্য সে বেশিদিন সাধারণ বাচ্চার মতন স্কুল গিয়ে পড়াশোনা করতে পারলো না।তার এই রকম অসাধারণ রূপ,ব্যাবহার গুলি দেখে কেউ তার সাথে খেলতো না,খেল্লে ও বেশিদের খেলতো না তার কেউ বন্ধু,বান্ধবী না থাকার কারণে সে অল্প অল্প বুঝতে পারতে ছিল সে অন্যদের থেকে  ভিন্ন হয়তো তার সাথে কেউ ভালো ভাবে মিলেমিশে না।তার পর  থেকে সে বাড়িতেই থাকতে শুরু করলো।কোনো কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে সে বের হত না তার এই অবস্থা দেখে তার মা বাবা খুব দুঃখ পেতেন।তার এই অবস্থা দেখে তার দাদা দিদিরাও সময়ের সাথে সাথে তার থেকে দূরে দূরে হওয়া শুরু করে দেয়।বাড়ির ভিতরে নিজের সন্তানগুলোর এই পৃথক পৃথক স্বভাব দেখে মা বাবা মনে মনে ভাবতে শুরু করেন যে ভগবান উনাদের ছোট বাচ্চাকে আশীর্বাদে এই অল্প নতুন জীবনটা দিলেন কেন যেখানে সে চলতেতো পারে কিন্তু বলতে শুনতে কিছুই পারে না।

 

বাচ্চাটি হয়তো এই কথা ভেবে সে বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিল যে সে দেখতে সুন্দর না সে কথা বলতে কথা শুনতে পারে না।গ্রামের,স্কুলের লোকেরা তাকে দেখে নানা কথাবার্তা শুনাইতো,তার সাথে কেউ খেলতো না তার কেউ বন্ধু বান্ধবি ছিল না।তার কারণে তার দাদা দিদিকে লজ্জা সয্য করতে হত তাদের বন্ধ বান্ধবির সামনে তার জন্য সে বাড়িতে বসতে শুরু করে এই সময় সে বাইরের জগৎ থেকে দূরে সরে গেলেও সে  তার মা বাবার হৃদয়ের আরও পাশে এসে গেলো।এই সময় সে দেখে যে তার মা বাবা বাড়ির পরিবারের সংসার চালানোর জন্য সংসারের কত কষ্ট তারা সহন করে আছে।বাবা দিনভর অন্যের বাড়িতে কাজ করার পরে রাত্রে ও ফ্যাক্টরিতে চৌকিদারি করতে যায়।মা ও বাড়ির কাজ তাড়াতাড়ি সেরে অন্যের বাড়িতে ঝি কাজ করতে যায়।এই কষ্ট সে বুঝে নেয় তাড়াতাড়ি সে হয়তো বলতে শুনতে ভালো ভাবে বোঝাতে পারে না কিন্তু হৃদয়ের কষ্ট বুঝতে পারে ভালো ভাবেই।

 

বাচ্চাটি হয়ত বাইরে জগৎতের নিজের সাথে হওয়া কষ্টের জন্য বাড়িতে থেকে ছিল।কিন্তু বাড়ির ভিতরের মা বাবার এই কষ্ট দেখে সে আর বাড়ির গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারলো না।সে ছোট বয়সেই নিজের সাথে হওয়া নানা কষ্টকর মুহূর্ত সমস্যাগুলি তার জিবনে দেখে চুপচাপ সয্য করলেও সে তার বাড়িতে নিজের মা বাবার এই কষ্টকর জীবন যাপন দেখে চুপচাপ সয্য করে বাড়িতে বসে থাকতে পারলো না।সে  নিজের মা বাবাকে এই সংসারিক খরচের আর্থিক অবস্থার কষ্ট দূর করার জন্য সাহায্য করার চেষ্টা শুরু করে।

 

এই চিন্তা ধারা হয়তো ওর দাদা দিদির মধ্যেতো কী গ্রামের শহরের কোনো সাধারণ বাচ্চাদের মধ্যেও আসেনি যে তাদের মা বাবাকে তারা ছোট বেলা থেকেই কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারে বলে।

 

বাচ্চাটি এখনও ছোটোই আছে কিন্তু তার সঙ্গে হওয়া সময়ের এক একটি মুহূর্তের সমস্যাগুলির যেভাবে মোকাবিলা করে আসছে ওই অভিজ্ঞতার জন্য হয়তো সে এত বেশি বুদ্ধিমানি হয়েছে আর আত্মনির্ভরতা কি জিনিস এই বয়সেই ও ভালো ভাবে বুঝে নিয়েছে।

 

বাচ্চাটি ছোটবেলা থেকেই স্কুল ভালো ভাবে যায়নি তার জন্য হয়ত তার স্কুল পড়ার ইচ্ছা নাই বলে সে স্কুল ছেড়ে বাড়িতে থেকে গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক লোকেরা যারা ছোটখাট শাঁখ, সবজির ব্যবসা করে তাদের সাথে নিকট হতে লাগলো আর সেই বয়স্ক লোকেদের সাথে সে ও গিয়ে তাদের সাহায্য করে দু-চার টাকা কামায় করে নিতো।সে নিজের মিঠাই খাওয়া ছোট খাট খেলনার জিনিস নিজের দরকারের সামান নিজেই কিনতে শুরু করে।মা বাবা তাকে এই সব কাজ না করার বারন করতো তবুও সে মানতো না।তাকে মা বাবা জোরজবরজস্তি করে পিটিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিলেও সে ভালো ভাবে পড়তো না।সে স্কুলে শুধু খেলা করে খাবার খেয়ে চলে আসতো তার জন্য তার বিদ্যালয়ের দিদিমুনিরা তার ওপর রেগে যেতেন।তার ছোট বেলা থেকেই কোনো বন্ধু বান্ধবি না থাকার জন্য সে একলা একলাই খেলতো সে কখনো গ্রামের মন্দিরের পূজা করে রাখা প্রসাদি কখনো চুরি করে খেয়ে নিত,কখনো গ্রামের নদীতে গিয়ে একলাই সাঁতার কেটে চানটান করে নিত,কখনো রাস্তার এক কিনারে ব্রিজে বসে একলাই গাড়িঘোড়া চলা ফেরার প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখতো সে প্রায় এই সব কাজ বাড়ি থেকে মা বাবাকে স্কুল যাচ্ছি বলে করতো।এই সব কথা জানতে পেরে তাকে স্কুল যাওয়ার জোরজবরজস্তি করতে ছেড়ে দেয়  তার মা বাবা।আস্তে আস্তে সে স্কুল ছেড়ে দেয় আর সেই বয়স্ক ব্যবসায়ীদের সাথে সে ব্যবসা করা শিখে নিজেও শাঁখ সবজির ব্যবসা শুরু করে দেয়।সে নিজের কামাই করা টাকা দিয়ে একটি পুরনো cycle ও কিনে নেয়।যেটাকে সে নিজেই  কখনো নিল,কখনো লাল রং করে চালাইতো।কবে কবে মুনাফা ভালো হলে  সে মা বাবাকে অল্পখানিক টাকা দিয়ে দিত বাড়ির খরচের জন্য কখনো বাবা অসুস্থ হলে বাজারঘাট,রেশনের চাল আটা সে নিজেই আনতো বাড়িতে।কখনো গ্রামবাসিদের অফিসের কোনো সরকারি কাজে গ্রামের লোকেদের ভিড়ের লাইন থাকলে লাইনের ভিড়ে ওর বাবা দাড়িয়ে থাকলে ও ওর বাবাকে কিছুক্ষানিক বসে আরাম করার আস্বাস দিতো আর নিজেই লাইনে দাড়ায় থাকতো।সে শুধু মা বাবার ভালো ছেলেই হয়েছে এই সব কাজ করে তা নয়। সে হয়তো বলতে শুনতে পারে না কিন্তু নাচতে ভালো পারে সে গ্রামের ভালো নাচগান করা ছেলে মেয়েদের নাচ দেখে সে শিখে নেয় ভালো নাচ করতে।গ্রামের কোনো প্রতিষ্ঠান,পূজা গুলিতে অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতা হলে সে ভালো নাচ করে পুরুস্কার জিতে নিয়ে আসতো বাড়িতে।তার সেই পুরুস্কার জিতে আনার জন্য শুধু মা বাবাই খুশি হতো তাই নয় তার দাদা দিদিও খুশি হত ওর উপরে ওর এই আত্মনির্ভরশীল  মনোভাব দেখে ওর পরিবারের সদস্যরাই শুধু খুশি ছিল তা নয় ওই গ্রামের সব গ্রামবাসী তাকে দেখে খুশি হতো।এত ছোট বয়সে কী ভাবে সে নিজের শরীর,গ্রামের জটিল প্রকৃতি,বাড়ির অবস্থার সাথে লড়ে এক আত্মবিশ্বাসী আত্মনির্ভরশীল মানুষ রূপে গড়ে তুললো নিজেকে বলে।যেখানে ভালো সুস্থ শরীর,ভালো আর্থিক অবস্থার বাড়ির পরিবারের সদস্য সন্তান ভালো শহরের শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের ও আত্মনির্ভরশীল মনোভাবের হয়তো কোনো বিচার থাকে না।সেখানে এই ছোট বাচ্চা সত্যিতেই আত্মনির্ভরশীলতার সর্বচ্চ বড় উদাহরণের প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আত্মনির্ভরশীল দেশে।

 

মানুষ হয়তো ভাবে যে এই আত্মনির্ভরতা কী জিনিস হতে পারে বলে,

 

"আত্মনির্ভরতা হল সেই অনুভূতি যে ছোট অপাহেচ বাচ্চাকেও বাড়ির গণ্ডি ভেঙে নিজের অস্তিত্ব এই সমাজের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাখতে শিখালো।

 

আত্মনির্ভরতা ছিল বলেই সেই ছোট বাচ্চা যার জন্ম থেকেই শারীরিক দোষ,জটিল গ্রাম সমাজের সামাজিক অবহেলার চিন্তাধারা ব্যবহারগুলিকে  পিছনে ছেড়ে এক নতুন জিবনের পথে সাহসের সাথে নিজের ও নিজের পরিবারের মাথা উঁচু করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলো এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে।

 

আত্মনির্ভরতা কখনো মানুষের শরীর,বাড়ির অবস্থা,সমাজের উপর নির্ভর থাকে না।এটি হল এক ধরনের মানসিক মনোবল  আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি যার মাধ্যমে একটি সাধারণ মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে।

 

আত্মনির্ভরতা একটি অপাহেচ বাচ্চা বা সামান্য সংখ্যায় সর্বশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে আসলেই শুধু দেশ অগ্রগতির পথে এগোবে তা নয়।এর জন্য সর্ব শ্রেণীর পরিবারের সদস্যদের সাথে পুরো দেশবাসিকে এক সঙ্গে মিলেমিশে আত্মবিশ্বাসীর বলে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।তাহলেই দেশ আত্মবিশ্বাসীর আত্মনির্ভরশীল জনগণের বলে বিশ্বতে নিজের অস্তিত্ব উজ্জল ভাবে উচ্চ মর্যাদায় টিকিয়ে রাখতে পারবে।" 

 

 

 

 

 

 


 

4 views0 comments

Recent Posts

See All
Post: Blog2 Post
bottom of page